কখনো
বিয়ের পর প্রথম যখন স্বামীর হাত ধরে শশুর বাড়িতে আসি তখন আমাকে আমার শাশুড়ী মা ঘরে না তুলে শশুরমশাই ঘরে তুলেছিল। আমি অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে আমার শাশুড়ি মা'কে খুঁজছিলাম। তখনই ফিসফিসিয়ে আমার স্বামী আমাকে বললো,
"মা'কে খুঁজছো?"
আমি ছোট্ট করে উত্তর দিলাম,
"মা এখন বাড়িতে নেই।"
"কোথায় গিয়েছে?"
"মা তোমার জন্য উপহার আনতে গিয়েছে।"
আমি অবাক হয়ে শুধু ভাবছিলাম আমার বিয়ের দিন শাশুড়ি মা কী এমন উপহার আনতে গিয়েছে? আমাকে যখন বাসর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো তখনও আমার শাশুড়ি মা আসেননি। বিয়ের রাতে অন্য সবাই নিজের স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে। আর আমি অপেক্ষা করছিলাম আমার শাশুড়ি মায়ের জন্য। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু কৌতুহলী স্বভাবের মেয়ে। তাই শাশুড়ি মায়ের উপহার দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। অবশেষে আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। আমার শাশুড়ি মা দু-হাত ভর্তি বই এনে আমার সামনে রাখলো। এত এত বই দেখে আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বই আমার বরাবরই প্রিয়। আমি বড্ড বই পাগল মেয়ে। সময় পেলেই বই নিয়ে বসে যাওয়া আমার কাজ। শাশুড়ি মা বইগুলো আমার সামনে রেখে বললো,
"তোমাকে আমার ছেলের বউ করে এনেছি। এটাই শুধু তোমার পরিচয় নয়। তোমাকে আমি আমার বাড়ির মেয়ে করে এনেছি। সেই মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এই ছোট্ট আয়োজন।"
শাশুড়ি মায়ের এহেন কথা শুনে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে বললাম,
"মা! এটা কোনো ছোট্ট আয়োজন নয়। এটা আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।"
শাশুড়ি মা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
"এই মেয়ে, কাঁদছো কেন?"
"আনন্দে!"
"শোনো মেয়ে, তোমার জন্য আরো একটা বিশেষ উপহার আছে?"
"কী উপহার?"
সেই মুহূর্তে আমার স্বামী অর্থাৎ আনাম আমার কাছে এসে আমার হাতে একটা উপহার দিলো। নীল রংয়ের কাগজে মোড়ানো একটা উপহার। আমি কাগজটা সড়ানোর পর চমকে গেলাম। আরো একটা বই। তবে এটা কোনো সাধারণ বই নয়৷ এটা আমার লেখা বই। আমি চকিত কন্ঠে শাশুড়ি মা'কে বললাম,
"এই বই যে প্রকাশনী ছাপানোর দায়িত্ব নিয়েছিল তারা তো বলেছিল আরো এক মাস সময় লাগবে।"
"সেটা তো তোমাকে চমকে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম।"
"মানে?"
"মানে প্রকাশনীটা আমার। আমি নিজেও বই পড়তে খুব ভালোবাসি। একটা সময় আমার ধ্যান, জ্ঞান সবই ছিল বই। বইয়ের প্রতি সেই ভালোবাসা থেকেই তৈরি করি আমার নিজস্ব প্রকাশনী।"
"মা, আপনি নিজেও জানেন না আপনি আমাকে আজ কত বড়ো উপহার দিয়েছেন। আমার স্বপ্ন ছিল একদিন আমার লেখাগুলো বইয়ের পাতায় ছাপানো হবে। আজ আপনি আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।"
"তোমার লেখার হাত ভালো। ভবিষ্যতে তুমিও হতে পারবে একজন খ্যাতিমান লেখিকা। কলম চালিয়ে যাও। কখনো এই কলম থামিয়ো না। হয়তো একদিন তোমার হাত ধরেই তৈরি হবে এক অনন্য সৃষ্টি।"
শাশুড়ি মায়ের কথাগুলো আমাকে খুব করে উৎসাহিত করতো। যেহেতু আমরা দুজনেই বই পাগল৷ তাই সময় পেলেই দুই শাশুড়ি বউমা মিলে বসে যাই বই নিয়ে। পড়ন্ত বিকেলে হাতে এক কাপ কড়া লিকারের চা, আর সাথে প্রিয় একখানা বই। আর কী লাগে একটা পড়ন্ত বিকেল সুন্দর হতে?
আমার শাশুড়ি মা আর আমি সব সময় একসাথে কাজ করি। সকালে উঠে নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা। তারপর সবার জন্য নাস্তা বানানো। নাস্তা খেয়ে সবাই বের হয়ে গেলে বাগানের গাছগুলোতে পানি দেওয়া। একসাথে খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া। দুপুরের খাবার খাওয়ার পর একটু ঘুমিয়ে নিয়ে বিকালে এক কাপ চা আর বই নিয়ে বসা আমাদের নিত্যদিনের কাজ।
দিন যায়, দিন আসে। কিন্তু আমাদের দুই শাশুড়ি বউমার প্রতিদিন বই নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতে ভুল হয় না কখনো। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভাগ্য করে এমন একজন শাশুড়ি মা পেয়েছি। যেখানে বিয়ের আগে মনে হতো আমার নিয়মিত বই পড়ার শখ আর নিজের কল্পনাগুলোকে লেখার মাধ্যমে রূপ দিতে হয়তো কখনোই পারবো না, সেখানে আমার শাশুড়ি মা আমার সম্পূর্ণ ধারণা টাকেই পাল্টে Prrbook
Upworkmarket
postmaster
topguru
monstarpublic
usamarking
powerbank
cutly
Redifiv
bookstar
link Youtubbook
tumblrro
Postmind
Probook
SocialMarking
Prrmarsub
Hastagcode
Wortweb
wwwsmbook
quora-answer
curred-add
wordpress-wo
classifiedsa
Top-Backlinks
Aliexpress
Twin-M
F-s-a-m-f
Gabsocialm
Temp Mail
দিয়েছে। যাদের একবার বই পড়ার নেশা ধরে যায়, তাদের আর কেউ এই নেশা থেকে বের করতে পারে না।
বিয়ের পর কখনো মনে হয়নি আমি আমার বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও আছি। কারণ আমার বাবার বাড়িতেও যেমন বইয়ের বিশাল সমাহার ছিল, আমার শশুর বাড়িতেও তেমন বিশাল বইয়ের সমাহার আছে। বরং একটু বেশিই বিশাল বইয়ের সমাহার আছে এখানে। আমার কপালে বই পড়ুয়া একজন স্বামী না জুটলেও বই পড়ুয়া শাশুড়ি মা পেয়েছি আমি। এমন ভাগ্য ক’জনেরই বা হয়?
★সমাপ্ত★
Comments
Post a Comment